Monday, October 13, 2014

রূপকথার গল্পগাঁথা বইয়ের গন্ধে মোড়া পাতা



                                       রূপকথার গল্পগাঁথা
                                    বইয়ের গন্ধে মোড়া পাতা  ...



 



সেই কোন ছোটবেলায় শোনা আর বইয়ের  পাতায় পড়া রাজা , রানী , মন্ত্রী , সেনাপতি , রাজপুত্র , রাজকুমারী , রাক্ষস , খোক্কস  , ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী , তেপান্তরের মাঠ , সোনার কাঠি , রূপোর কাঠির গল্প।  বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে মনের আঙিনায় জীবন্ত হয়ে ওঠা চরিত্রগুলি আজ বড় বেলায় এসে ফিঁকে পড়ে যায়।  হাথ বাড়িয়ে আঙ্গুলগুলি বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাতে যায় কিন্তু  গিয়ে পড়ে  Mouse বা Touch  Screen - এর ওপরে।  চোখের সামনে বইয়ের অক্ষর নয় Computer বা Mobile Screen ভেসে ওঠে।  বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাবার গন্ধ নেই তাতে।  এ যে Cyber যুগ ,  Mouse  Click - এ E-Book পড়া , Game খেলা।  আগের বই  পড়ার নেশা এতে এসে ঠেকেছে। 



এখন কোন বাচ্চার হাথে গল্পের বই উপহার দিলে সে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে এই কৌতুহল প্রকাশ করে না যে বইটি কার লেখা বা কী সব রোমাঞ্চকর গল্প ও চরিত্ররা আছে এতে।  তার প্রশ্ন থাকে -

" এটা  কি Video Game ? "


এ হল Advance যুগ , প্রযুক্তি কথা বলে এখানে।  বই পড়া যে সেকেলে ব্যাপার ! প্রচুর মাথা খাঁটিয়ে ভাবতে হয় সেখানে।  আর বর্তমান প্রজন্ম ভাবতে নারাজ।  সবকিছু  Instant চাই এখন , অনেকটা সেই Ready to eat food  এর মত , চটপট রান্না ঝটপট গলাধঃকরণ।  সময় কই একটা বই নিয়ে পড়ে , উপলব্ধি করে , অনুভব করে মনের গভীরতা বিস্তারের।  তার থেকে ওই সময়টায় Phone বা  Online Chat  বা Game ও Shopping Page ঘাঁটায় অধিক মনোযোগীর দল ক্রমশঃ ভারী হচ্ছে।


    আর যারা এখনো মাথার কাছে পুরনো গন্ধওয়ালা  বই নিয়ে ঘুমোতে যায় , আজও বইমেলা চত্বরে ভীড় জমায়  শুধুমাত্র চপ , কাটলেট , চাউমিন , বুড়িরচুল , আইসক্রীম খাবার লোভে নয় বা হুজুগে পড়ে কেবল   Selfie তুলে facebook ,  WhatsApp বা   Instagram - এ Post করবার তাগিদে নয় , ভাল বই খোঁজা এবং পড়ার তাগিদে  তারা কে ! বইপাগল সেকেলের  দল  ! যারা একালেদের সাথে পা মিলিয়ে চলতে অপারগ।  পৃষ্ঠা পাল্টাবার গন্ধ যাদের মাতাল করে আজও , বই পাড়ায়  এসে পা থমকে যায় হাজারো বইয়ের মেলায়।  বই দেখে , বই ছুঁয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী মনে হয় , বই হাথে পেয়ে সব পেয়েছি ভাব চোখে-মুখে ফুটে ওঠে।


রূপকথারা কিন্তু এখনো আনাচে-কানাঁচে বইয়ের পাতা থেকে উঁকি-ঝুঁকি মারে।  এক বাচ্চাদের বইয়ের দোকানে সেদিন চোখে পড়ল একটি ৭-৮ বছরের বাচ্চা মেয়ে হাথে ঠাকুমার ঝুলি নিয়ে খুশিতে ডগমগ হয়ে তার মা কে ডেকে বলল

" এই দেখো মাম্মা কী পেয়েছি ! যে  Story - টাই তুমি কাল বলছিলে এখানে আছে সেটা।  এই বইটা আমি নেব ".

মা উত্তরে হেসে সম্মতি জানায়।  মেয়েটি বইটি খুলে প্রথম পৃষ্ঠাটি নাকের কাছে তুলে ধরে আর বলে ওঠে -

" অাহ্ ! কী  সুন্দর গন্ধ ! "

দেখে মনে হল এই তো গল্পরা এখনো বইয়ের পাতা থেকে হারিয়ে যায়নি।


Tuesday, October 7, 2014

লক্ষ্মী মেয়ে


 
                             " সংসার সুখের হয় রমণীর  গুণে " 

                           



                                             
                                      বহুল প্রচলিত কথা এটি।  সেই রমনী যার গুণে সংসার সুখী - সুসজ্জিত হয়ে ওঠে সে যদি লক্ষ্মী স্বরূপা হয় তাহলে তো কথায় নেই ! রূপে - গুণে সম্বলিত সেই গৃহলক্ষ্মী সংসারের সুখ , আনন্দ , সমৃদ্ধি  বয়ে আনে। 

                                          আর  লক্ষ্মী মেয়েটি যেই সংসারে অধিষ্ঠান করবে সেই স্থানটি যদি উপযুক্ত না হয় তাহলে সেটি  লক্ষ্মীর পক্ষে উতলা বা চঞ্চলা হওয়া কি সমুচীন নয় ! আজকের লক্ষ্মীরা ঘর বাইরে দুদিক সামলায় , একাধারে তারা চাকুরীরতা এবং গৃহকর্মে ব্যাপৃতা।  সবদিক সমানভাবে সমানতালে সামলাতে পারলে তবেই সে যোগ্য গৃহলক্ষ্মী হয়ে ওঠার পারদর্শীতা  অর্জন করবে।  

                                  তবে  লক্ষ্মীদের অবশ্যই নিজের প্রতিভার পরিচয় দেবার সময় খেয়াল রাখতে হবে অন্যের বিশেষ করে যে পরিবারে সে লক্ষ্মীরূপে বিরাজিতা সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতিভায় ও প্রতিপত্তিতে যাতে আঘাত না হানে তার প্রতিভা। সতর্ক ভাবে তাদের মান-সম্মান , তাদের সীমিত বা অপরিসীম সব পারদর্শীতা , তাদের কার্যকারিতা বজায় রেখে  এই গৃহলক্ষ্মীটিকে নিপুণভাবে সংসারধর্ম নির্বাহ করে যেতে হবে।  যার অর্থ হল এই গৃহলক্ষ্মী গৃহের সর্বোচ্চ স্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করবেন না , পারিবারিক দায়বদ্ধতার মধ্যে অবশ্যই সীমাবদ্ধ থেকে তার রীতিনীতি পালন করবে।  এর জন্যে যদি সে উপযুক্ত প্রশংসা নাও পায় তা হাসি মুখে মেনে নেবে এবং সকল উপেক্ষা ও বঞ্চনা সে সহ্য করে নিতে সক্ষম হবে। এইভাবেই সে পরিবারের সবার মন জয় করবার চেষ্টা করে যাবে তবেই এক আদর্শ গৃহলক্ষ্মীর মর্যাদা পাবার যোগ্য রূপে  বিবেচিত হবেন। 


                       আর যিনি এই নিয়মাবলী মানবেন না তিনি ! খুব সহজ , তিনি এই লক্ষ্মী গৃহিনীদের বাজারে অচল মুদ্রা সমান।  তার পরিবারের তখন আক্ষেপের সীমা থাকবে না যে কী ভেবে তারা এই লক্ষ্মী ঘরে এনেছিলেন আর কী ভাবে ব্যর্থ হলো এই  লক্ষ্মী নিজেকে আদর্শ রূপে প্রমাণ করতে ! তখন এই অচলা লক্ষ্মীটিকে নানাভাবে অনুতাপে-পরিতাপে দগ্ধ করবার প্রয়াস করা হবে।  সে যে কতখানি অযোগ্য পারিবারিক কর্তব্য পালনে তা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে অন্যান্য গৃহলক্ষ্মীদের সাথে তুলনার মাধ্যমে  যাতে এই অচলা  লক্ষ্মীটি দ্রুত শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে নিজেকে সচলা লক্ষ্মীরূপে প্রতিপন্ন করতে পারে। কোনো দ্বিধা নেই মানতে যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই শিক্ষাদান সফল হয়। 


                               যেখানে একান্তই পরিবার বিফল হয় তখন লক্ষ্মীর কপালে জোটে দুর্নাম - অলক্ষ্মী ! পরিবারের অযোগ্য  সদস্য , অহংকারী , জেদী , অবাধ্য , স্বার্থপর , খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি।  এই অলক্ষ্মী কে নিয়ে আফশোষ , অনুযোগ , অভিযোগের  শেষ নেই পরিবারের। 


                                      তাই   লক্ষ্মীকে লক্ষ্মী হয়েই থাকতে হবে , ব্যতিক্রমী হলে চলবে না।  তবেই না পরিবার ও সংসার সুখী হবে সেই লক্ষ্মীরূপী রমণীর গুণে  ......