Tuesday, November 18, 2014

অপছন্দের গন্ধ


                                           স্বনামধন্য লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যাযের আত্মজীবনীমূলক রচনা  " অর্ধেক জীবন " - এ একটি বিশেষ শব্দের উল্লেখ ছিল যেটা পড়তে গিয়ে চোখ আটকে গেছিল , আর তার মর্মার্থ উদ্ধার করতে আরো খানিকটা আত্ম-অন্বেষণের পর্যায় পৌছানো যায়।  সেই শব্দটি হল -

                                    "  অপছন্দের গন্ধ  "


                     আমাদের চারপাশে পরিচিত , আধা-পরিচিত , অপরিচিত বৃত্তে এমন বহুজনের সাথে সংযোগ স্থাপিত হয় যাদের মধে কাউকে আমরা পছন্দ করি বেশী  বা কম করে , তেমনি অপছন্দেরও কম - বেশী তারতম্য হয়ে থাকে।  সেই ব্যক্তিবর্গ  আমাদের সম্পর্কে ভাল - মন্দ মতামত পোষণ করে থাকে।  একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় সেটা , একেই বলা হচ্ছে পছন্দ বা অপছন্দের গন্ধ।  পছন্দের গন্ধে কারোর কোনো অভিযোগ বা আপত্তি হতে  পারে না বরং সুগন্ধি সুবাসের  মত সে মন ভাল করা হয়।  


আর অপছন্দের গন্ধ !  সে যদি বোঝা যায় তাহলে তা মোটেই সুবাস বহন করে না. যেমন  বাইরে থেকে ওপর ওপর দেখলে হয়ত মনে হল একজন আরেকজনকে বেশ পছন্দ করছে বা ভাল লাগছে কিন্ত অভ্যন্তরস্থ পছন্দের মর্ম তা প্রকান্তরে অপছন্দ।  কিন্ত কিছুটা লোক দেখাতে বা কিছুটা নিজের সঠিক মনোভাব প্রকাশ না করে বা কখনো স্বার্থের প্রয়োজনে পছন্দের ভাণ করছে সে। 


           তাই বলে কি অপছন্দের গন্ধ সেই ব্যক্তি পর্যন্ত পৌছাবে না যাকে অপছন্দ করা হচ্ছে ? নিশ্চয় তা নয়।  যে ব্যক্তিকে অপছন্দ করা হয় একমাত্র তাকে কিছু অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিতের মাধ্যমে সহজেই অপছন্দ প্রকাশ করা যায় , সেইজন অপছন্দের ঘ্রাণ পেয়েও কখনো কার্যবশত প্রকাশ করে উঠতে পারে না কিন্ত বুঝতে সক্ষম হয় অপছন্দের গন্ধ ক্রমশঃ গাড় হয়ে মিশে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে যা তার মজ্জা ভারী করে দিচ্ছে , এমনি প্রকট ও অপ্রকাশ্য সেই অপছন্দের গন্ধ। ....

Thursday, November 6, 2014

খেলোয়াড়ী চাল

 


                                                     চারদিকে চাপ চাপ অন্ধকারের মধ্যে থাকা অনন্ত নিশ্চুপতা , মাঝে মধ্যে বুকের পাঁজরের মধ্যে চেপে বসে নিষ্ঠুর পিশাচের মত , দম নেবার অবকাশ দেয় না।  কখনো ঝিম ধরিয়ে আবার সজোরে টুঁটি চেপে ধরে।  ভাবাবেগ নিয়ে খেলার পরিণাম এই অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণা।  কষ্ট হয় , অব্যক্ত কষ্ট গলা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়।  চোখ দুটো জ্বালা করে।  মনে হয় এই খেলার কী শেষ নেই ! একী  বিভৎস রূপ অসময়ের ! আর কতক্ষণ ভোগ করতে হবে এ যন্ত্রণার খেলা !


                                               স্বার্থ নেশা এমন জাল বিছিয়ে রেখেছে যে বেরোবার উপায় নেই।  লোভে ঢেকে গেছে পারস্পরিক স্নেহের আদ্রতা , ভদ্রতার মুখোশ পরে রয়েছে দম্ভ , ঐতিহ্যের নাম করে যে যেমন করে পারছে বৈভব দেখিয়ে চলেছে , কী নির্লজ্জ তার প্রদর্শন ! আত্মগ্লানি।, অনুশোচনা নামক শব্দগুলি নিঃশেষ হতে হতে তলানিতে এসে ঠেকেছে।  আর তার স্থান নিয়েছে নিজমুখীতা , আত্মপ্রেম , সংকীর্ণ মানসিকতা।  নিজেকে ভালবাসার এত মোহ যে মোহান্ধ হয়ে অপরের হিতাহিত চিন্তা লুপ্ত হয়েছে।  শুরু হয়েছে এক পৈশাচিক খেলা।  অন্যের মূল্যবোধ কে আঘাত করা যার দ্বারা এক অনাবিল আনন্দ ও মানসিক শান্তি চরিতার্থ করা যায়।


                                       কিছুমাত্র অন্যায় বোধ নেই এই খেলায়।  প্রতারণার অপর নামান্তকরণ এই খেলা।  নিজ স্বার্থে কাউকে ব্যবহার করে প্রেম প্রেম খেলা।  কারোর আবেগ , অনুভূতি , গভীর বিশ্বাস , প্রেমের প্রকাশ , তার স্বপ্রতিভ অভিব্যক্তি , অব্যক্ত অনুরাগ - সবকিছু নিয়ে খেলা করা।  এ খেলার নিয়ম হল বুঝেও না বোঝার নিঁখুত অভিনয় করে যাবে খেলোয়াড়  , কখনো প্রকাশিত হবে না যে এখানে সবটাই খেলা ছিল বা স্পষ্ট করে বললে খেলাচ্ছলে প্রতারণা।


                                আর বুঝে গেলে খেলা শেষ  নয় , বরং নতুন করে অন্য খেলা শুরু , শুধু খেলোয়াড়ের নির্বাচিত স্থান , কাল , পাত্র বদলে যাবে।  এই খেলায় খেলোয়াড়কে কিন্তু দায়ী করা চলবে না।  প্রেমে প্রতারণা করেছে বা ঠকিয়েছে এ অপবাদ তো তাকে মোটেই দেওয়া যাবে না।  খেলোয়াড় যুক্তি দেবে তার স্বপক্ষে যে সে সম্পূর্ণ নির্দোষ , অবগত নয় ।  সে তো  বন্ধুত্বের হাথ বাড়িয়েছিল ! সেই বন্ধুত্বকে প্রেমে পর্যবসিত করার তার কিছুমাত্র অভিপ্রায় ছিল না।  অপরপক্ষ ভুল বুঝেছে , তার বন্ধুত্বের সংজ্ঞা অন্যভাবে ব্যখ্যা করেছে।


                                           যদি তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় এমন কিছু মুহূর্ত যা প্রত্যক্ষ রূপে বন্ধুত্বের সাথে সাথে আরো বিশেষ সম্পর্কের নির্দেশক।  এমনকিছু ভাবনা সে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে প্রকাশ করেছে যা বন্ধুত্বের অতিরিক্ত ভাললাগা বা ভালবাসার প্রতীকস্বরূপ।  তখন   খেলোয়াড় তার মোক্ষম চালটি প্রয়োগ করবে।  কিছু মুহূর্ত সে স্মরণেই আনতে পারবে না , যেন তার স্মৃতিপট থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে সেগুলি আর কিছুক্ষেত্রে নীরব থেকে তার যোগ্য খেলোয়াড়ী মনোভাব সে চিনিয়ে দেবে।


                                        কারণ খেলোয়াড় ভালমত অবগত যে খেলার কোন অংশে আত্মরক্ষা করা উচিত , আর আত্মরক্ষার প্রধান অস্ত্রই হল মৌনতা যাতে প্রতিপক্ষ যাকে সে বন্ধুত্বের আবরণে মুড়ে রেখে খেলা চালিয়ে যাচ্ছে সে কোনরূপ প্রতি - আক্রমণ না করতে পারে বা তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ সংগ্রহ না করতে পারে , তবেই তো খেলা সুচারুরূপে সম্পন্ন হবে এবং শেষ বিজয়ীর হাসিটি খেলোয়াড়ের মুখে উদ্ভাসিত হবে।  খেলোয়াড় এখানে কোন বিরোধীতার সম্মুখীন তো হয়ই না বরং বিপুল সমর্থন লাভ করে তার পরিবারবর্গ ও বন্ধুমহল থেকে।  এ খেলায় তাকে অজেয় বানাতে এদের সহযোগিতা ও পরামর্শ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


                                           আর খেলোয়াড়ের ক্রীড়াঙ্গনের পারদর্শীতা এখানেই কিন্তু শেষ হবে না , খেলোয়াড় তার নিজের অপরাধবোধ যা মনের অন্তঃস্থলে কিছুটা কিছু সময়ের জন্য থেকে যায় কিন্তু প্রকাশ কিছুমাত্র দেখায় না তাতে প্রলেপ দিতে বিপক্ষকে দায়ী করে।  পাল্টা অভিযোগ জানায় তার খেলোয়াড়ী চরিত্র বুঝতে অক্ষম তার খেলার সাথীটি , বন্ধুত্ব ও প্রেমের ব্যবধান রাখতে সে জানে না।


                                               ব্যাস , এখানেই খেলোয়াড়ের বাজীমাত।  নিঁখুত দৃশ্যাঙ্কন ও অভিনয় দিয়ে সে ক্রীড়াঙ্গনে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখে দেয় আর মনে মনে বাহবা কুঁড়িয়ে পরবর্তী খেলা শুরু করবার জন্য দৃশ্য , স্থান , পাত্র নির্বাচন করে , শুধু অপেক্ষা কাল অর্থাৎ সঠিক সময় যখন আবার নতুন খেলা শুরু হবে।


                                                      আর যার সাথে খেলা করা হয় তার কী হয় ? কখনো সে নিষ্ফল আক্রোশে দগ্ধ হয় , কখনো প্রতিশোধস্পৃহ মনোভাব প্রকাশ করে , কখনো নীরবে অশ্রুপাত করে পরাজয়ের গ্লানি বহন করে , কিন্তু কোন অবস্থাতেই খেলোয়াড়কে পাল্টা  চ্যালেঞ্জ জানাবার সাহস পায় না , শঙ্কিত হয় আবার যদি নিপুণ খেলোয়াড় তার বিশ্বাস এবং ভাবাবেগের সাথে খেলা শুরু করে দেয় ! পুনরায় পরাজয়ের গ্লানি বইবার শক্তি বা সাহস আর তার অবশিষ্ট থাকে না।  সে ক্রীড়াঙ্গন ত্যাগ করার সংকল্পই স্থির করে।  পরবর্তী সময় কখনো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে খেলোয়াড়ের পরবর্তী খেলা দেখতে হয় তাকে  নাহলে কালের অতল গহবরে হারিয়ে যেতে বাধ্য হয়।  হারিয়ে যায় তার সেই স্বপ্ন , সেই সম্পর্ক যাকে সে সত্য ও সুন্দর ভেবে ভুল করেছিল।


                                             খেলোয়াড় স্বগর্বে বিজয়ীর মুকুট পরে হর্ষ চিত্তে পরবর্তী খেলায় মনোনিবেশ করে পুনরায় ক্রীড়াঙ্গনে পদার্পণ করে।  শুরু হয় বন্ধুত্বের আবরণে মোড়া আরেক দান প্রেম প্রেম খেলা।


                                        এই নির্লজ্জ খেলা চলতে থাকে।  খেলোয়াড় আর তার সমর্থকেরা উপভোগ করে , প্রশ্রয় দান করে।  কেউ যে প্রতিবাদ করবার নেই ! বিপক্ষ যে কম শক্তিসম্পন্ন , কোন অনুযোগ জানাতে চাইলেও খেলোয়াড় হয় এটি ভদ্রভাব দেখায় নয় নিস্পৃহ আচরণ করে।  জমে ওঠে খেলা।  কেউ উচ্বস্বরে বলে না  -

                                                   " এবার থাম , খেলা শেষ " .




                                                 



                                         

Monday, October 13, 2014

রূপকথার গল্পগাঁথা বইয়ের গন্ধে মোড়া পাতা



                                       রূপকথার গল্পগাঁথা
                                    বইয়ের গন্ধে মোড়া পাতা  ...



 



সেই কোন ছোটবেলায় শোনা আর বইয়ের  পাতায় পড়া রাজা , রানী , মন্ত্রী , সেনাপতি , রাজপুত্র , রাজকুমারী , রাক্ষস , খোক্কস  , ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী , তেপান্তরের মাঠ , সোনার কাঠি , রূপোর কাঠির গল্প।  বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে মনের আঙিনায় জীবন্ত হয়ে ওঠা চরিত্রগুলি আজ বড় বেলায় এসে ফিঁকে পড়ে যায়।  হাথ বাড়িয়ে আঙ্গুলগুলি বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাতে যায় কিন্তু  গিয়ে পড়ে  Mouse বা Touch  Screen - এর ওপরে।  চোখের সামনে বইয়ের অক্ষর নয় Computer বা Mobile Screen ভেসে ওঠে।  বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাবার গন্ধ নেই তাতে।  এ যে Cyber যুগ ,  Mouse  Click - এ E-Book পড়া , Game খেলা।  আগের বই  পড়ার নেশা এতে এসে ঠেকেছে। 



এখন কোন বাচ্চার হাথে গল্পের বই উপহার দিলে সে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে এই কৌতুহল প্রকাশ করে না যে বইটি কার লেখা বা কী সব রোমাঞ্চকর গল্প ও চরিত্ররা আছে এতে।  তার প্রশ্ন থাকে -

" এটা  কি Video Game ? "


এ হল Advance যুগ , প্রযুক্তি কথা বলে এখানে।  বই পড়া যে সেকেলে ব্যাপার ! প্রচুর মাথা খাঁটিয়ে ভাবতে হয় সেখানে।  আর বর্তমান প্রজন্ম ভাবতে নারাজ।  সবকিছু  Instant চাই এখন , অনেকটা সেই Ready to eat food  এর মত , চটপট রান্না ঝটপট গলাধঃকরণ।  সময় কই একটা বই নিয়ে পড়ে , উপলব্ধি করে , অনুভব করে মনের গভীরতা বিস্তারের।  তার থেকে ওই সময়টায় Phone বা  Online Chat  বা Game ও Shopping Page ঘাঁটায় অধিক মনোযোগীর দল ক্রমশঃ ভারী হচ্ছে।


    আর যারা এখনো মাথার কাছে পুরনো গন্ধওয়ালা  বই নিয়ে ঘুমোতে যায় , আজও বইমেলা চত্বরে ভীড় জমায়  শুধুমাত্র চপ , কাটলেট , চাউমিন , বুড়িরচুল , আইসক্রীম খাবার লোভে নয় বা হুজুগে পড়ে কেবল   Selfie তুলে facebook ,  WhatsApp বা   Instagram - এ Post করবার তাগিদে নয় , ভাল বই খোঁজা এবং পড়ার তাগিদে  তারা কে ! বইপাগল সেকেলের  দল  ! যারা একালেদের সাথে পা মিলিয়ে চলতে অপারগ।  পৃষ্ঠা পাল্টাবার গন্ধ যাদের মাতাল করে আজও , বই পাড়ায়  এসে পা থমকে যায় হাজারো বইয়ের মেলায়।  বই দেখে , বই ছুঁয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ সুখী মনে হয় , বই হাথে পেয়ে সব পেয়েছি ভাব চোখে-মুখে ফুটে ওঠে।


রূপকথারা কিন্তু এখনো আনাচে-কানাঁচে বইয়ের পাতা থেকে উঁকি-ঝুঁকি মারে।  এক বাচ্চাদের বইয়ের দোকানে সেদিন চোখে পড়ল একটি ৭-৮ বছরের বাচ্চা মেয়ে হাথে ঠাকুমার ঝুলি নিয়ে খুশিতে ডগমগ হয়ে তার মা কে ডেকে বলল

" এই দেখো মাম্মা কী পেয়েছি ! যে  Story - টাই তুমি কাল বলছিলে এখানে আছে সেটা।  এই বইটা আমি নেব ".

মা উত্তরে হেসে সম্মতি জানায়।  মেয়েটি বইটি খুলে প্রথম পৃষ্ঠাটি নাকের কাছে তুলে ধরে আর বলে ওঠে -

" অাহ্ ! কী  সুন্দর গন্ধ ! "

দেখে মনে হল এই তো গল্পরা এখনো বইয়ের পাতা থেকে হারিয়ে যায়নি।


Tuesday, October 7, 2014

লক্ষ্মী মেয়ে


 
                             " সংসার সুখের হয় রমণীর  গুণে " 

                           



                                             
                                      বহুল প্রচলিত কথা এটি।  সেই রমনী যার গুণে সংসার সুখী - সুসজ্জিত হয়ে ওঠে সে যদি লক্ষ্মী স্বরূপা হয় তাহলে তো কথায় নেই ! রূপে - গুণে সম্বলিত সেই গৃহলক্ষ্মী সংসারের সুখ , আনন্দ , সমৃদ্ধি  বয়ে আনে। 

                                          আর  লক্ষ্মী মেয়েটি যেই সংসারে অধিষ্ঠান করবে সেই স্থানটি যদি উপযুক্ত না হয় তাহলে সেটি  লক্ষ্মীর পক্ষে উতলা বা চঞ্চলা হওয়া কি সমুচীন নয় ! আজকের লক্ষ্মীরা ঘর বাইরে দুদিক সামলায় , একাধারে তারা চাকুরীরতা এবং গৃহকর্মে ব্যাপৃতা।  সবদিক সমানভাবে সমানতালে সামলাতে পারলে তবেই সে যোগ্য গৃহলক্ষ্মী হয়ে ওঠার পারদর্শীতা  অর্জন করবে।  

                                  তবে  লক্ষ্মীদের অবশ্যই নিজের প্রতিভার পরিচয় দেবার সময় খেয়াল রাখতে হবে অন্যের বিশেষ করে যে পরিবারে সে লক্ষ্মীরূপে বিরাজিতা সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতিভায় ও প্রতিপত্তিতে যাতে আঘাত না হানে তার প্রতিভা। সতর্ক ভাবে তাদের মান-সম্মান , তাদের সীমিত বা অপরিসীম সব পারদর্শীতা , তাদের কার্যকারিতা বজায় রেখে  এই গৃহলক্ষ্মীটিকে নিপুণভাবে সংসারধর্ম নির্বাহ করে যেতে হবে।  যার অর্থ হল এই গৃহলক্ষ্মী গৃহের সর্বোচ্চ স্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করবেন না , পারিবারিক দায়বদ্ধতার মধ্যে অবশ্যই সীমাবদ্ধ থেকে তার রীতিনীতি পালন করবে।  এর জন্যে যদি সে উপযুক্ত প্রশংসা নাও পায় তা হাসি মুখে মেনে নেবে এবং সকল উপেক্ষা ও বঞ্চনা সে সহ্য করে নিতে সক্ষম হবে। এইভাবেই সে পরিবারের সবার মন জয় করবার চেষ্টা করে যাবে তবেই এক আদর্শ গৃহলক্ষ্মীর মর্যাদা পাবার যোগ্য রূপে  বিবেচিত হবেন। 


                       আর যিনি এই নিয়মাবলী মানবেন না তিনি ! খুব সহজ , তিনি এই লক্ষ্মী গৃহিনীদের বাজারে অচল মুদ্রা সমান।  তার পরিবারের তখন আক্ষেপের সীমা থাকবে না যে কী ভেবে তারা এই লক্ষ্মী ঘরে এনেছিলেন আর কী ভাবে ব্যর্থ হলো এই  লক্ষ্মী নিজেকে আদর্শ রূপে প্রমাণ করতে ! তখন এই অচলা লক্ষ্মীটিকে নানাভাবে অনুতাপে-পরিতাপে দগ্ধ করবার প্রয়াস করা হবে।  সে যে কতখানি অযোগ্য পারিবারিক কর্তব্য পালনে তা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে অন্যান্য গৃহলক্ষ্মীদের সাথে তুলনার মাধ্যমে  যাতে এই অচলা  লক্ষ্মীটি দ্রুত শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে নিজেকে সচলা লক্ষ্মীরূপে প্রতিপন্ন করতে পারে। কোনো দ্বিধা নেই মানতে যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই শিক্ষাদান সফল হয়। 


                               যেখানে একান্তই পরিবার বিফল হয় তখন লক্ষ্মীর কপালে জোটে দুর্নাম - অলক্ষ্মী ! পরিবারের অযোগ্য  সদস্য , অহংকারী , জেদী , অবাধ্য , স্বার্থপর , খারাপ ইত্যাদি ইত্যাদি।  এই অলক্ষ্মী কে নিয়ে আফশোষ , অনুযোগ , অভিযোগের  শেষ নেই পরিবারের। 


                                      তাই   লক্ষ্মীকে লক্ষ্মী হয়েই থাকতে হবে , ব্যতিক্রমী হলে চলবে না।  তবেই না পরিবার ও সংসার সুখী হবে সেই লক্ষ্মীরূপী রমণীর গুণে  ......